দখিনের খবর ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। কয়েকটি ধাপে এ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ হাজার ১০৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় বসার আগেই শিক্ষার্থীদের ফি পরিশোধ করতে হবে। আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই-বাছাইয়ের পর পরীক্ষার জন্য মনোনীত হলে প্রার্থীর মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভা শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য এবং গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পরীক্ষার আয়োজন করা সম্ভব নয়। এজন্য কবে নাগাদ পরীক্ষা শুরু করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধাপে ধাপে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে আবেদন ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীর মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হবে। পরীক্ষায় বসার আগে তাকে ফি পরিশোধ করতে হবে। একজন প্রার্থী আবেদনের ক্ষেত্রে কোথায় ভর্তি হবে এবং পরীক্ষায় বসবে, তা নিজেই পছন্দ করতে পারবেন। এজন্য ২০টি চয়েজ বা পছন্দ করার অপশন থাকবে। তিনি আরও বলেন, একসঙ্গে সকলের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো আসনে বসার মতো সুযোগ থাকবে, ততো শিক্ষার্থীকে এসএমএস দিয়ে ডাকা হবে। এভাবে কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা নেয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে নেয়া হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান হবে এক নম্বর। ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা হবে। ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন যাচাই-বাছাই করতে আলাদা ৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করতে আগামী সপ্তাহে সভায় বসার তথ্য জানয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম শেখ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কবে কোথায় পরীক্ষা আয়োজন হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আগামী সপ্তাহে পরিষদের সভায় এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন এবং আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, অ্যাকাউন্টিং, বিজনেস অর্গানাইজেশন ও ম্যানেজমেন্ট এবং আইসিটি বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে। আর মানবিক বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলা, ইংরেজি এবং আইসিটি বিষয়ের ওপর করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসি, এইচএসসির জিপিএ বড় একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। তবে এবার যে পরিমাণ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন হবে। লিখিত ভাল করেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কষ্ট হবে। তবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যেহেতু এবার সবাই পাস করেছে, সেজন্য সবার হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্ভব হবে না। সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে তাও তো নয়। আমাদের আরও নানা রকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার অনেক জায়গা আছে। সেখানে জায়গা খালি থাকে, কিন্তু আমরা শিক্ষার্থী পাই না। এবার আশা করি সেদিকে অনেকেই যেতে উদ্বুদ্ধ হবে। এটা তাদের জন্যও ভালো, দেশের জন্যও ভালো। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য নূন্যতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট জিপিএ ৭ (চতুর্থ বিষয় ছাড়া), ব্যবসায় শিক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট জিপিএ ৬.৫ (চতুর্থ বিষয় ছাড়া) এবং মানবিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মোট জিপিএ ৬ (চতুর্থ বিষয় ছাড়া) নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ২০ নম্বর, রসায়নে ২০, জীববিজ্ঞান, গণিত এবং আইসিটি মিলে ৪০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। জীববিজ্ঞান, আইসিটি ও গণিতের মধ্যে যে কোনো দুটি বিষয়ের উত্তর দিতে হবে। আর বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ১০ নম্বর করে মোট ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। বাণিজ্য বিভাগের জন্য হিসাববিজ্ঞানে ২৫ নম্বর, বিজনেস অর্গানাইজেশন ও ম্যানেজমেন্টে ২৫, আইসিটিতে ২৫, বাংলায় ১৩ এবং ইংরেজি বিষয়ে ১২ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। আর মানবিক বিভাগে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটি বিষয়ে ২৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। তিনটি প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে গুচ্ছ পরীক্ষা: এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বিবদ্যালয়কে (বুয়েট) ছাড়াই গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। মেডিকেল কলেজ ও বুয়েটের পরই তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম শেখ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, বুয়েট আসবে না বলে আমরা জানতে পেরেছি। আনুষ্ঠানিক চিঠি এখনও পাইনি। সেক্ষেত্রে আমরা তিন বিশ্ববিদ্যালয় মিলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে আলাদা পরীক্ষা নেব। তবে এখনও তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। বুয়েট আমাদের সঙ্গে এলে ভালো হতো। তারা সিনিয়র হিসেবে সামনে থাকত, তবে তারা যে শর্ত দিয়েছিল তা মানা সম্ভব নয়। কবে ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেডিকেল এবং বুয়েটের পরই আমরা ভর্তি পরীক্ষা নেব। মেডিকেলের তারিখ জানা গেলেও বুয়েটের তারিখ জানা যায়নি। তবে বুয়েটের কাছাকাছি সময়েই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে। উপাচার্যদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান ড. মো. রফিকুল ইসলাম। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বুয়েট আসবে না। তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানতে পেরেছি। তবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে তিন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, বুয়েটের সভায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি লিখিত আকারে জানানো হবে। বুয়েটের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটিতে সই করলে তা জানিয়ে দেয়া হবে।
Leave a Reply